views
ইসলামে প্রতিটি শব্দ, দোয়া ও যিকির আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও সাহায্য লাভের এক বিশেষ মাধ্যম। মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনের বহু কঠিন মুহূর্তে এমন কিছু দোয়া রয়েছে, যেগুলো শুধু মুখে বললেই নয়, হৃদয় থেকে পড়লে আল্লাহর সহায়তা এসে যায়। এ ধরনের একটি বিশেষ দোয়া হলো লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম আরবি। এটি ছোট হলেও অত্যন্ত গভীর অর্থবহ, এবং হাদীস শরীফে একে "জান্নাতের গুপ্ত ধন" বলা হয়েছে।
এই প্রবন্ধে আমরা জানবো এই দোয়ার আরবি পাঠ, অর্থ, ফজিলত, এবং কেন একজন মুসলমানের প্রতিদিনের জীবনে এই যিকির থাকা উচিত। শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সাধারণ মুসলিম কিংবা গবেষক—সবার জন্যই এটি একটি উপকারী ও মননশীল আলোচনা হবে।
দোয়ার পূর্ণ পাঠ ও উচ্চারণ
লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম আরবি (لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيْمِ)
উচ্চারণ: La hawla wa la quwwata illa billahil 'Aliyyil Azim
বাংলা অর্থ: “কোনো ক্ষমতা ও শক্তি নেই, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া; তিনি সর্বোচ্চ ও মহান।”
এই দোয়া সংক্ষেপে একটি স্বীকারোক্তি—যেখানে একজন মুসলমান নিজের সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতা প্রকাশ করে এবং আল্লাহর সাহায্য ও কুদরতের প্রতি পূর্ণ নির্ভরতা ঘোষণা করে।
এই দোয়ার উৎস ও গুরুত্ব
এই দোয়াটি বহু সহীহ হাদীসে বারবার এসেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ একটি জান্নাতের গুপ্ত ধন।”
— (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য এক হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি দুঃখের সময়, ক্লান্তির সময় বা বিপদে পড়ে এই দোয়া পড়ে, তার জন্য আল্লাহ সেই কষ্ট লাঘব করে দেন। এটি এমন একটি যিকির, যা সব ধরনের মানসিক, শারীরিক বা পারিপার্শ্বিক দুর্বলতা দূর করার জন্য সুপারিশকৃত।
এছাড়া, ইসলামের অনেক বড় বড় আলেমগণ বলেছেন যে, এই দোয়া একজন মানুষের ঈমান ও আস্থা বাড়িয়ে তোলে এবং শয়তান থেকে রক্ষা করে।
জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে এই দোয়া পড়া উচিত?
লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম আরবি এমন একটি দোয়া, যা মুসলিম জীবনের নানা ক্ষেত্রে বারবার ব্যবহার করা যেতে পারে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ দেওয়া হলো:
-
বিপদে পড়লে: হঠাৎ দুর্ঘটনা, কোনো দুঃসংবাদ বা মানসিক চাপের সময় এই দোয়া মনে পড়লে তা স্বস্তি আনে।
-
কোনো কাজ শুরু করার আগে: যদি আপনি কোনো কঠিন কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন, যেমন পরীক্ষা, ইন্টারভিউ, বড় কোনো দায়িত্ব, তাহলে এই দোয়া আপনাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে।
-
রাগ বা হতাশার সময়: যখন কারো ওপর রাগ আসে, কিংবা হতাশ বোধ করেন, তখন এই দোয়া আপনার ভেতরের ভার হালকা করতে পারে।
-
নামাজের পর যিকিরে: ফরয নামাজের পর তাসবীহ, তাহমীদ, তাকবীরের পাশাপাশি এই দোয়াটি পড়া অত্যন্ত ফজিলতের কাজ।
দোয়ার আত্মিক ও মানসিক উপকারিতা
ইসলাম শুধু বাহ্যিক আচরণের ধর্ম নয়, বরং আত্মিক প্রশান্তি এবং মানসিক ভারসাম্যও নিশ্চিত করে। এই দোয়া একজন মুসলমানকে তার সীমাবদ্ধতা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আল্লাহর কাছে আশ্রয় নিতে উৎসাহিত করে।
এই দোয়া পড়লে:
-
আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়, কারণ আপনি জানেন—আল্লাহ আছেন, তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন।
-
অহংকার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, কারণ আপনি স্বীকার করছেন আপনি কিছুই করতে পারেন না, আল্লাহ না চাইলে।
-
শয়তানের কুমন্ত্রণা দূর হয়, কারণ আল্লাহর স্মরণ মানেই নিরাপত্তা।
-
মন শান্ত হয়, কারণ এই দোয়া মনে করিয়ে দেয় আপনি একা নন—আল্লাহ আছেন আপনার পাশে।
শিক্ষার্থীদের জন্য এই দোয়ার গুরুত্ব
একজন শিক্ষার্থীর জীবনে উদ্বেগ, হতাশা এবং চাপে পড়া খুবই সাধারণ। পরীক্ষার আগে মানসিকভাবে দুর্বল বোধ করা, পড়া মনে না থাকা, ভালো ফলাফলের দুশ্চিন্তা—এসব মোকাবেলার জন্য এই দোয়া এক অনন্য ও সহজ উপায়।
শুধু মুখস্থ না করে এই দোয়া হৃদয় দিয়ে বুঝে পড়লে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রশান্তি ও সাহায্য এনে দিতে পারে। তাই স্কুল-কলেজে পড়ুয়া Muslim শিক্ষার্থীদের এই দোয়া প্রতিদিন সকালে এবং ঘুমানোর আগে পড়া অভ্যাস করা উচিত।
উপসংহার
ইসলাম এমন একটি জীবনব্যবস্থা, যেখানে প্রতিটি অনুভূতির জন্য নির্দিষ্ট দোয়া আছে। ভয়, দুর্বলতা, হতাশা বা অস্থিরতা—এসব অনুভবকে মোকাবেলা করার জন্য এই ছোট্ট কিন্তু অর্থবহ দোয়াটি এক বিশাল শক্তির উৎস।
লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম আরবি দোয়াটি নিয়মিত পড়লে শুধু আখিরাত নয়, দুনিয়ার জীবনও শান্তিময় হয়ে উঠতে পারে। তাই মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত এই দোয়া কেবল মুখে উচ্চারণ করা নয়, বরং অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করা এবং প্রতিদিনের জীবনে ব্যবহার করা।
এই দোয়া শুধু সংকটে নয়, প্রতিদিনের যিকির হিসেবে পড়লে তা আধ্যাত্মিক শক্তি ও আল্লাহর রহমতের মাধ্যম হয়ে ওঠে। আপনি আজ থেকেই এই দোয়াটি জীবনধারায় অন্তর্ভুক্ত করুন এবং আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য আশা করুন—কারণ সত্যিই, "কোনো শক্তি নেই, আল্লাহ ছাড়া।"


Comments
0 comment