এশার নামাজ ১৭ রাকাত – কেন এই নামাজে রয়েছে এত রাকাত ও কীভাবে আদায় করবেন
এশার নামাজ ১৭ রাকাত

এশার নামাজ ১৭ রাকাত – কেন এই নামাজে রয়েছে এত রাকাত ও কীভাবে আদায় করবেন

ইসলামে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মুসলিম জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিটি নামাজের রয়েছে নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যা, নিয়ম ও গুরুত্ব। কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন করেন— এশার নামাজ ১৭ রাকাত কেন? অন্য নামাজের তুলনায় এখানে রাকাত সংখ্যা বেশি হওয়ার পেছনে রয়েছে নির্দিষ্ট শরঈ ব্যাখ্যা এবং গুরুত্ব। এই ব্লগে আমরা সহজ ভাষায় জানবো, এশার নামাজে মোট ১৭ রাকাত কীভাবে বিভক্ত, কেন তা গুরুত্বপূর্ণ এবং কিভাবে সঠিকভাবে তা আদায় করতে হয়।

এশার নামাজ কখন পড়া হয়?

এশার নামাজ দিনের শেষ নামাজ। সূর্য ডোবার পর মাগরিব শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাত শুরু হয় এবং এশার নামাজের সময় আসে। আকাশে সম্পূর্ণ অন্ধকার নেমে আসার পর থেকে ফজরের আগে পর্যন্ত এশার সময় থাকে। তবে দেরি না করে যথাসময়ে আদায় করাই উত্তম।

এশার নামাজ ১৭ রাকাত – রাকাত বিভাজন ও নিয়ম

অনেকেই ভাবেন, একটানা ১৭ রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। আসলে, এশার নামাজে ১৭ রাকাত রয়েছে, তবে তা একসঙ্গে নয়—বিভিন্ন ভাগে আদায় করা হয়। নিচে এর সঠিক বিভাজন দেওয়া হলো:

  1. ৪ রাকাত সুন্নাতে মোয়াক্কাদা – এটি ফরজের আগে পড়া সুন্নত, যা রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত আদায় করতেন এবং উম্মতের জন্য জোরালোভাবে উৎসাহিত করেছেন।

  2. ৪ রাকাত ফরজ – এটি এশার মূল ফরজ নামাজ, জামাতের সঙ্গে আদায় করা উত্তম।

  3. ২ রাকাত সুন্নাত (না-মোয়াক্কাদা) – ফরজের পরে পড়া সুন্নত নামাজ। যদিও এটি নিয়মিত নয়, তবে পড়লে সওয়াব পাওয়া যায়।

  4. ২ রাকাত নফল নামাজ – অতিরিক্ত ইবাদতের অংশ হিসেবে পড়া যায়।

  5. ৩ রাকাত বিতর – ওয়াজিব নামাজ, যা এশার পর আদায় করা হয় এবং রাতে পড়া সর্বশেষ নামাজ হিসেবে গণ্য হয়।

সব মিলিয়ে ৪ + ৪ + ২ + ২ + ৩ = ১৭ রাকাত, যাকে একত্রে বলা হয় এশার নামাজ ১৭ রাকাত।

বিতর নামাজের গুরুত্ব

বিতর নামাজের কথা আলাদাভাবে বলা জরুরি, কারণ অনেকেই এটি অবহেলা করেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি বিতর পড়ে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (আবু দাউদ)। বিতর তিন রাকাত হয়, সাধারণত দুটি রাকাতের পর তাকবির ও বিশেষ দোয়া (কুনূত) পড়ে এক রাকাতে সালাম ফেরানো হয়।

নামাজের ফজিলত ও উপকারিতা

এশার নামাজ দিনের শেষ নামাজ হওয়ায় এটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে, সে যেন সারারাত ইবাদত করল।” (মুসলিম)

এছাড়া, রাতে ঘুমানোর আগে এশা নামাজ পড়া মানে দিনটির পূর্ণতা, আত্মিক প্রশান্তি এবং গুনাহ থেকে মুক্তির একটি উপায়। যারা নিয়মিত এশা নামাজ পড়েন, তাদের ঘুম প্রশান্ত হয়, এবং তারা পরের দিনের জন্য আত্মিক শক্তি সঞ্চয় করতে পারেন।

এশার নামাজ না পড়লে কী হয়?

ইসলামে ফরজ নামাজ না পড়া মারাত্মক গুনাহ। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে এশার নামাজ পড়েন না, তাদের আল্লাহর নিকট তওবা করা উচিত এবং নিয়মিত নামাজে ফিরে আসা উচিত। কারণ এশা নামাজ না পড়লে শুধু ফরজ নয়, সুন্নত ও বিতরও বাদ পড়ে যায়।

উপসংহার

এশার নামাজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নামাজ। এর মাধ্যমে একজন মুমিন তার দিনকে পূর্ণতা দেন, আত্মার প্রশান্তি অর্জন করেন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেন। তাই প্রতিদিন নিয়মিতভাবে এশার নামাজ ১৭ রাকাত সঠিক নিয়মে পড়া উচিত, বিশেষত ফরজ, সুন্নত ও বিতরের গুরুত্ব বুঝে।

আসুন, আমরা সবাই নামাজের গুরুত্ব বুঝে এশার নামাজকে গুরুত্ব সহকারে আদায় করি এবং আমাদের জীবনে আল্লাহর রহমতকে আহ্বান করি।

এশার নামাজ ১৭ রাকাত – কেন এই নামাজে রয়েছে এত রাকাত ও কীভাবে আদায় করবেন
disclaimer

Comments

https://m.pittsburghtribune.org/assets/images/user-avatar-s.jpg

0 comment

Write the first comment for this!